স্বদেশ ডেস্ক:
ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ষষ্ঠ ধাপেও আওয়ামী লীগের প্রায় সমান সংখ্যক ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান পদে জয় লাভ করেছেন। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ২১৮টি ইউপির মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ১২ জনসহ চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের ১১৭ প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। সরাসরি ভোটে নৌকা জয়ী হয়েছে ১০৫টি ইউপিতে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতেছেন ৯৫টি ইউপিতে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি (জাপা) তিনটি ও জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি ইউপিতে জয়ী হয়েছে। দুটি ইউনিয়নের ফল স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সমন্বিত ফল প্রকাশ করা হয়।
জানা গেছে, এই ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ০৭ শতাংশ। ৪০ লাখ ৬৯ হাজার ৫৩৮ জন ভোটারের মধ্যে ২৮ লাখ ১০ হাজার ৬৮০ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে সব চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে বগুড়া সদর উপজেলার ফাঁফোড় ইউপিতে। এখানে ভোটের হার হচ্ছে ৮৭.৮৮%। আর সব চেয়ে কম ভোট পড়েছে দোহারের মুকসুদপুর ইউপিতে। এই ইউপিতে ভোটের হার ৫৩.৭৩%। এখানে ২২ হাজার ৫৬২ ভোটারের মধ্যে ১২ হাজার ১২২ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।
জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত ৭০৮ টি ইউপির মধ্যে নৌকা জয়ী হয়েছে ৩৪১ ইউপিতে, স্বতন্ত্র ৩৪৬টিতে, জাতীয় পার্টি ২ টিতে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ২টিতে এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ১টি ইউপিতে জয়ী হয়েছে। এছাড়া ১৩ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় ফল ঘোঘণা করা হয়নি। আদালত ও ইসির নির্দেশে ২টি ইউপির ভোট স্থগিত করা হয়।
ইসির তথ্য অনুসারে প্রথম ধাপে গত ২১ জুন অনুষ্ঠিত ভোটে ২০৪টি ইউপির মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৪৮ জন চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছিলেন। ২০ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ১৬০টি ইউপির মধ্যে নৌকার প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচিত হন ১১৯ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ২১ জুনের ভোটে ৪৯ জন এবং ২০ সেপ্টেম্বর জয় পান ৩৬ জন। সব মিলিয়ে প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের ২৬৭ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৮৫ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৪টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ৩৩০টিতেই জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এ ধাপে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীরা ৪৮৬টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন।
তৃতীয় ধাপের ৯৯২টি ইউপি নির্বাচনের ফলে দেখা যায়, চেয়ারম্যান পদে ৪৪৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ৫২৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৪৪৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
গত ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ থাপে অনুষ্ঠিত ৮৩৬ ইউপির মধ্যে ৩৯০টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। ৩৯৬টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন; তাদের মধ্যে ৪৮ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি ৭, ইসলামী আন্দোলন ২ এবং জাকের পার্টি ১ ইউপিতে জয় লাভ করে। কিছু ইউপির অনানুষ্ঠানিক ফল স্থগিত হওয়ায় সেগুলোর ফল ঘোষণা করা হয়নি।
জানা গেছে, ৬ ধাপে মোট ৩ হাজার ৯৫২টি ইউপির অনানুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করেছে ইসি। এর মধ্যে ২ হাজার ১৩২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এবং ১ হাজার ৬৯২টি ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। বাকিগুলোতে অন্য দলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি ইউপির ফল অনিয়ম ও সহিংসতার কারণে স্থগিত রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয়বারের মতো দেশে স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ প্রায় অর্ধেক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় প্রতীক জয়ী করার জন্য বারবার নির্দেশের পাশাপাশি বিদ্রোহীদের হুশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। এর পরও বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোটে অংশ নিয়ে নৌকাকে হারিয়ে জয় তুলে নিচ্ছেন।